রোজাদারদের কাছে এর অর্থ ও মূল্য সম্পূর্ন ভিন্ন
রোজা প্রাচিনতম
ইবাদতের একটি। শেষ নবীর উম্মতদের পূর্বেও অন্যান্য নবীদের উম্মতদের জন্য রোজা ফরজ
ছিল। বছর ঘুরে বার বার রোজা আসে, রোজা চলে যায়। আমাদের জন্য আসলে রোজা কি নিয়ে
আসে, আমরাই বা কি পাই রোজা থেকে। আসলে চাওয়া-পাওয়ার হিসেব করতে যাওয়া সত্যিই বেশ
জটিল বিষয়। আমাদের সকলের চাওয়া আবার এক রকম না, সকলের একই রকম পাওয়ায় সন্তুষ্টও
হওয়া সম্ভব না। সমাজ বদলেছে, আমাদের চাওয়া পাওয়ারও পরিবর্তন হয়েছে। স্থান কাল
পাত্র ভেধে আমরা একেকজন একেক দৃষ্টি কোন থেকে রোজার দেওয়া উপহার পেয়ে সন্তুষ্ট হই
বা নিজেকে আনন্দিত করি।
রোজা শুরু হয়েছে।
রোজাকে সামনে রেখে আমাদের অনেক কিছু অর্জনের টার্গেট রয়েছ। কারণ সে তো আবার এক বছর
পরে আসবে। অবশ্য অনেকেই রোজা শুরুর বেশ আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে থাকেন। রোজার প্রাপ্তি ষোল আনা পাওয়ার আশায় অনেক ব্যাবসায়িরা আগে
থেকেই রোজার মাসে অধিক
ব্যবহৃত পন্যের মজুদ করে কৃত্রিম ভাবে দাম বাড়ানোর ব্যবস্থা করে থাকেন। পন্যের দাম
বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন সিন্ডিকেট করে থাকেন। কোন কোন সিন্ডিকেট আবার রোজার পবিত্রা
রক্ষার্তে রোজার মাসে পন্যের দাম যাতে না বাড়ানো লাগে সেই জন্য রোজার দু-এক মাস
আগে থেকেই বাড়িয়ে রাখেন।
সরকারী অফিসের জুন মাসের আগে খরচ না করতে পারায়
বাজেট ফিরে যাওয়ার ভয়ে মে মাসে যেভাবে কেনা-কাটা করেন, তেমনি রোজার মাসের
কেনা-কাটা দেখলে মনে হয় যেন অধিকাংশ রোজাদারগণেরই জীবনের বাজেট রোজার পরেই ফিরিয়ে
নেয়া হবে। তাই তো যা পারো রোজা শেষ হওয়ার আগে শেষ খাওয়া খেয়ে নাও! কেউ আবার
হাদিসের ব্যাখ্যা খুজে পান- ‘রোজার মাসে যত ঈচ্ছা খাও, এমাসে খাওয়ার কোন হিসাব
আল্লাহ্কে দিতে হবে না’।
অধিকংশ অফিসে
কর্মচারিদের জন্য রোজার মাস মহা প্রাপ্তির মাস। সারা বছরের বকেয়া যত বিল এমাসে ছেড়ে
দিতে হবে। রোজা শেষ হওয়ার আগেই পার্সেন্টের হিসাব ঠিক মতো করতে হবে, কারণ রোজার
মাসেই যাকাতের কাপড় কিনতে হবে, সারাবছরের দান খয়রাত এমাসেই করতে হবে। এ মাসে দানে
দশগুণ বেশি ছওয়াব পাওয়া যায়! তাই তো আমাদের কাছে রোজার অর্থ ও প্রাপ্ত ভিন্ন
ভিন্ন।
কিন্ত প্রকৃত রোজাদারদের
কাছে এর অর্থ ও মূল্য সম্পূর্ন ভিন্ন। রোজাকে তারা আত্নসংযমের বছরে একবার প্রশিক্ষণ
হিসেবে গ্রহণ করে- ত্যাগ স্বীকার, আত্নশুদ্ধি ও চরিত্র উন্নয়নের প্রক্রিয়া হিসাবে রোজা ঈমানদারদের জন্য এক বড়
প্রাপ্তি।