WAZIPOINT Engineering Science & Technology: October 2013

Wednesday, October 30, 2013

বৈদ্যুতিক বাতি কিনতেও আধুনিক শিক্ষা প্রয়োজন!

বৈদ্যুতিক বাতি কিনতেও কি আধুনিক শিক্ষা প্রয়োজন?



New Way to Shop for Light Bulb
চিত্র: বাতি কেনার নিক্তি
আপনার রান্নাঘরের, বাথরুমের বা ড্রইংরুমের বৈদ্যুতিক বাতি ফিউজ হয়ে গেছ। কি করবেন? পুরাতনটা খুলে দেখবেন কত ওয়াট। আর দোকানে গিয়ে সেই মানের বা কাছাকাছি মানের আর একটা কিনে এনে লাগাবেন। কিন্তু আপনি সচেতন আপনার এনার্জি সেভিং এর প্রতি দ্বায়িত্ব রয়েছ। তাই তো জানা প্রয়োজন আপনার পুরাতন ৪০ বা ৬০ ওয়াটের ইনক্যান্ডিসেন্ট বাল্বের পরিবর্তে এনার্জি সেভিং এর কত ওয়াটের বাল্ব কিনতে হবে যাতে আপনি পূর্বের বাল্বের সমান বা বেশি আলো পান। প্রকৃত এনার্জি বা টাকা সেভিং এর জন্য সঠিক স্থানে সঠিক বাল্ব লাগাতে হবে। অযথা বেশি আলোর বা প্রয়োজনীয় স্থানে কম আলোর বাল্ব লাগালে টাকা ও সেবা কোনটাই সেভ হবে না। সেভিং চিন্তা মাথায় রেখে, লাইট-বাল্বের জেনারেশন পরিবর্তনের সময়, আপনাকে আলোর পরিমাণ ঠিক রাখার জন্য প্রথমেই আলো পরিমাপের একক সম্পর্কে সম্পর্কে ধারনা থাকতে হবে।

আলো পরিমাপের একক হল লুমেন যা প্রতিটি বাল্বের প্যাকেটে লেখা থাকে। কিন্তু আমরা সাধারণত ওয়াট  দেখে বাল্ব কিনতে বেশি অভ্যস্ত। এখন ধরুন আপনার ৬০ ওয়াটের ইনক্যান্ডিসেন্ট বাল্বের পরিবর্তে এনার্জি সেভিং বাল্ব লাগাবেন, কিন্তু কত ওয়াট? এর জন্য প্রথমেই দেখতে হবে ৬০ ওয়াটের ইনক্যান্ডিসেন্ট বাল্বের লুমেন কত। যদি ইহা ৮০০ লুমেন হয়, তাহলে আপনি সহজেই ৮০০ লুমেন বা এর কাছাকাছি মানের জন্য এনার্জি সেভিং বাল্ব নির্বাচন করতে পারবেন।

টেকনোলজি প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে- যেমন VCR থেকে DVD, এনালগ থেকে ডিজিটাল টিভি, তেমনি লাইট-বাল্বও। অনেক বছর ধরেই গবেষকরা এমন এক নতুন বাল্ব তৈরির কথা ভাবছেন যা একই আলো দিবে, কিন্তু কম শক্তি খরচ করবে। বাজারে এখন অনেক ধরনেরই এনার্জি সেভিং বাল্ব পাওয়া যাচ্ছে যেমন- CFL (কম্প্যাক্ট ফ্লোরেসেন্ট ল্যাম্প), LED (লাইট ইমিটিং ডায়োড) ও হ্যালোজেন ইনক্যান্ডিসেন্ট ইত্যাদি। এগুলো বিভিন্ন রং, ডিজাইন ও সাইজের হয়ে থাকে যা কম বিদ্যুৎ খরচ করে বেশি আলো দিয়ে থাকে এবং অধিক টেকসই হয়।


ইন্ডোর লাইটিং:

অনেক ধরনের বাল্ব আছে, আপনি যে কোনটি পছন্দ করতে পারেন- হ্যালোজেন ইনক্যান্ডিসেন্ট, CFL (কম্প্যাক্ট ফ্লোরেসেন্ট ল্যাম্প) ও LED (লাইট ইমিটিং ডায়োড) ইত্যাদি। যদিও এগুলোর প্রাথমিক খরচ বেশি কিন্তু লাইফ টাইম ও এনার্জি সেভিং এর বিষয় চিন্তা করলে লাভজনক।

এনার্জি সেভিং ইনক্যান্ডিসেন্ট (হ্যালোজেন):

এনার্জি সেভিং  বা হ্যালোজেন ইনক্যান্ডিসেন্ট বাল্ব সাধারণ বাল্বের তুলনায় ২৫% বেশি কার্যকরী এবং তিনগুণ বেশি টেকসই। এগুলোও বিভিন্ন রং, ডিজাইন, সাইজের ও ডিমার আকারের পাওয়া যায়।

CFL বাল্ব :

 এনার্জি ষ্টার কোয়ালিফাইং CFL বাল্ব সাধারণ ইনক্যান্ডিসেন্ট বাল্বের তুলনায়  প্রায় ৭৫% বিদ্যুৎ সাশ্রয় করে এবং ১০গুন বেশি টেকসই হয়ে থাকে।

LED বাল্ব:

 এটা একটা সম্পূর্ণ নতুন ধরনের বাল্ব যা প্রচলিত বাল্বের মতোই আলো দিয়ে থাকে। ইহা CFL এর চেয়েও কম বিদ্যুৎ খরচ করে এবং সাধারণ ইনক্যান্ডিসেন্ট বাল্বের তুলনায়  প্রায় ২৫গুণ বেশি টেকসই হয়ে থাকে। দিন দিন এর চাহিদা বৃদ্ধ পাচ্ছে।

আউটডোর লাইটিং:

 অনেকেই সিকিউরিটি ও ডেকোরেশনের জন্য আউটডোর লাইট ব্যবহার করে থাকেন.  অনেক দিন টিকে থাকার জন্য ও বাহিরের আবহাওয়ার উপযোগী হওয়ায় LED বাল্ব বেশ কার্যকরী হতে পারে। অধিক সাশ্রয়ীর জন্য সৌর শক্তি চালিত আউটডোর লাইটিং সিস্টেম ব্যবহার করাই উত্তম।

বিভিন্ন  প্রকারের এনার্জি সেভিং বাল্ব
চিত্র: বিভিন্ন  প্রকারের এনার্জি সেভিং বাল্ব

Thursday, October 24, 2013

ভবিষ্যতের খাদ্য সমস্যার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় জি.এম. ফুড

উচ্চ ফলনশীল ফসল প্রয়োজন যা লবণাক্ত জমি ও পানিতে চাষ সম্ভব। এ ক্ষেত্রে জি. এম. ফুডই আশার আলো দেখাতে পারে।



GM Apple



বিশ্বের জনসংখ্যা প্রায় ৬শ কোটি এবং ধারনা করা হচ্ছে আগামী ৫০ বছরে ইহা দ্বিগুণ হবে। এই বিস্ফোরিত জনসংখ্যার জন্য খাদ্য জোগাড় করা আগামী বিশ্বের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ। বুদ্ধাদের ধারনা জি.এম. ফুডই কেবলমাত্র ভবিষ্যতের খাদ্য সমস্যার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারে।

সাম্প্রতকি বছরগুলোতে জি.এম. ফুড নিয়ে ইউরোপ-আমেরিকার সংবাদপত্র গুলো বেশ চমকপ্রদ সংবাদ পরিবশেন করছে যার প্রভাব সারা বিশ্বের সংবাদ মাধ্যমগুলোতে পরছে। উন্নত দেশগুলোর বিশেষ করে ইউরোপ-আমরেকিার বিভিন্ন পরিবশেবাদি ও জনস্বার্থ সংরক্ষনবাদি গ্রুপ সক্রিয়ভাবে এর বিরোধিতা করে আসছে। জি.এম. ফুড নিয়ে অনেক গবেষণা চলছে। এই ফুড গ্রহণের উপকারিতা ও অপকারিতার পক্ষে-বিপক্ষে অনেক তর্ক-বিতর্ক চলছে। নব্বই এর দশকের শেষের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের ফুড এন্ড ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন (FDA) সরকারি ভাবে জি.এম ফুড অনুমোদনের নীতিমালা তৈরির কাজ করে।

জি.এম. ফুড কি?

জি.এম. ফুড বা জি.এম.ও. (Genetically-Modified Organisms) হলো বহুল আলোচিত বিষয় যে পদ্ধতিতে প্রাণীকোষের পরিবর্তন সাধিত করে মানুষ ও পশুর জন্য খাদ্য-শস্য উৎপাদন করা হয়। উদ্ভিদের কিছু বিশেষ গুনাগুণ যেমন-পোকা-মাকড় দমনের ক্ষমতা, পুষ্টিগুণ ইত্যাদি কাঙ্খিতমানে  পাওয়ার জন্য গবেষণাগারে এসব উদ্ভিদকে মৌলিক পরিবর্তন (modified) করা হয়। প্রচলিত পদ্ধতিতে শস্য বা উদ্ভিদের এই কাঙ্খিত গুনাগুণ পেতে হলে বিশেষ তত্বাবধানে বার বার উৎপাদনের মাধ্যমে করা সম্ভব। কিন্তু সেটা অনেক সময়সাপেক্ষ ও একেবারে সঠিক-মানের করা সম্ভব হয় না। কিন্তু জেনে-টিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে অতি অল্প সময়ে ও সঠিক-মানের গুণসম্পন্ন শস্য উৎপাদন করা সম্ভব। উদ্ভিদ কোষের একেক জিন একেক ধরনের কাজ করে থাকে। বিজ্ঞানীরা এক উদ্ভিদের জিন অন্য উদ্ভিদে স্থানান্তর করে, কখনও কখনও অউদ্ভিদজাতিয় কোষ থেকে জিন স্থানান্তর করেও  নতুন জাতের উচ্চ ফলনশীল, অধিক পুষ্টি-মানসম্পন্ন বা পোকামাকড় দমনকারী উদ্ভিদ তৈরি করছেন। 

জি.এম. ফুড কিভাবে অধিক ফলনশীল হয়:

পোকা-মাকড় প্রতিরোধ ক্ষমতা:

প্রতি বছর পোকা-মাকড়ের কারণে প্রচুর পরিমাণ ফসল ধ্বংস হয় এবং এই পোকা-মাকড় দমনের জন্য হাজার হাজার টন কীটনাশক ক্রয়ের পিছনে কৃষকদের প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হয়। ভোক্তারা কীটনাশক ব্যবহৃত খাদ্য-শস্য খেতে আগ্রহী নয় অন্যদিকে কৃষিতে ব্যবহৃত অতিরিক্ত সার ও কীটনাশক পানির সাথে মিশে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করছে। সুতরাং জি.এম. ফুড উৎপাদন করে সহজেই কীটনাশক ব্যবহার পরিহার করা সম্ভব এবং এতে উৎপাদন খরচও কমে যাবে।

আগাছা দমনঃ

প্রচলিত নিড়ানি পদ্ধতিতে আগাছা দমন খরচ ও সময়  স্বাপেক্ষ।কৃষকরা কখনও কখনও আগাছা দমনের কীটনাশক ব্যবহার করে থাকে যা উৎপাদন খরচ বাড়ায় ও পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে। এক্ষেত্রে সীমিত আকারে কীটনাশক ব্যবহার করে স্বল্প খরচে জি.এম. ফুড উৎপাদন করা যেতে পারে।

ফসলের রোগ প্রতিরোধ:

 অনেক ভাইরাস, ফাঙ্গাস ও ব্যাকটেরিয়া রয়েছে যা খাদ্য-শস্যের অনেক ক্ষতি করে থাকে।বিজ্ঞানীরা এসব রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্ত জি.এম. ফুড উদ্ভাবনের চেষ্টা যাচ্ছেন।

তাপ-রোধক ক্ষমতা বৃদ্ধি:

অপ্রত্যাশিত ঠাণ্ডায় অনেক সময় আলু, তামাক, স্ট্রবেরী ইত্যাদি শস্যের ক্ষতি হয়ে থাকে। জেনে-টিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে ঠাণ্ডা পানির মাছের জিন এসব উৎভিদে প্রতিস্থাপন করে তাপ-সহনশীল করা সম্ভব।

লবণাক্ততা প্রতিরোধ ক্ষমতা:

পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে সমুদ্র উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং লবণাক্ত জমির পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। তা ছাড়াও জন সংখ্যা অতিবৃদ্ধির ফলে আবাদি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে এবং অনাবাদী লবণাক্ত জমি আবাদ করার প্রয়োজন হয়ে পড়ছে। সুতরাং এমন উচ্চ ফলনশীল ফসল প্রয়োজন যা লবণাক্ত জমি ও পানিতে চাষ সম্ভব। এ ক্ষেত্রে জি. এম. ফুডই আশার আলো দেখাতে পারে।


Wednesday, October 23, 2013

ধূমপাণ কেন করি

 ধুমপান ক্ষতিকর, তবও মানুষ কেন ধুমপান করে


সিগারেটের অপর নাম মজা



কোন সিগারেট কোম্পানিকে অন্যান্য পণ্যের মত প্রচার-প্রচারণা করতে হয় না। বলতে হয় না এই ব্রান্ড অন্যটার চেয়ে বেশি ভাল বা মজাদার।  তারপরও এর বিক্রি কিন্তু থেমে থাকে না। ক্রেতা কিন্তু ঠিকই খুঁজে নিচ্ছে তার পছন্দের ব্রান্ড। মজার ব্যাপার হল আপনি যদি ধুমপায়িকে তার ধুমপানের কারণ জিজ্ঞাসা করেন তাহলে সে বলবে-ধূমপান যে পরিমাণে মানুষিক প্রশান্তি দেয়, সেই পরিমাণ মানসিক চাপও প্রয়োগ করে। এর স্বাদকে বর্ণনা বা পরিমাপ করা যায় না। ধূমপান থেকে যে পরিমাণ প্রশান্তি পাওয়া যায়, অন্য কিছু থেকে সেটা সম্ভব নয়।


সিগারেটের অপর নাম মজা:

আপনি যদি জানতে চেষ্টা করেন মানসিক চাপটা আসলে কি? দেখতে পাবেন এটা আসলে চিরাচরিত প্রত্যাশা বা চাহিদা, আর তা হল নিজেকে প্রকাশ করা। আপনি দেখবেন আমরা কেউই কখনও আমাদের শৈশবে সম্পূর্ণরূপে বেড়ে উঠিনা; আমরা সবসময় ভাবনাহীন আনন্দ খুঁজে বেড়াই। আমাদের বেড়ে উঠার সময় আনন্দগুলো সময়ের প্রয়োজনে কাজের এবং নিরলস প্রচেষ্টার অধীনস্থ হয়ে পড়ে। ধূমপান, এ সময় আমাদের অনেকের কাছে পূর্ণতা বা স্বাধীনতার বিকল্প হিসেবে আসে যা খুব তাড়াতাড়িই  অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়।পরবর্তীতে বৈধ উপায়ে  কাজে বিঘ্ন ঘটানো ও সময় চুরি করার একটা সুন্দর অজুহাত হিসেবে দেখানো সম্ভব হয়। আমরা কাজ করার সময় বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়তে পারি এবং ধূমপানের সমপরিমাণ সময় বিশ্রাম নিয়ে পুনঃরায় সতেজ হয়ে উঠতে পারি, কিন্তু ধূমপান ছাড়া শুধুমাত্র বসে বিশ্রাম নেয়া চিন্তা করতে পারিনা। আসলে ধূমপানটা মজার অজুহাত!



সিগারেট দৈনন্দিন জীবনের পুরস্কার:

আমাদের অধিকাংশই আমরা পুরস্কারের জন্য লালায়িত! সিগারেটও এক প্রকার পুরস্কার যা আমরা নিজেরাই নিজেদের প্রত্যাশা-পূরণের জন্য খেয়ে থাকি। যখন আমরা ভাল কিছু করি, একটা সিগারেট দিয়ে নিজেদেরকে কনগ্র্যাজোলেট করি, যার মানে আমরা ভাল ছেলে হিসেবে নিজেদের সার্টিফাই করি। আমরা আমাদের নিজেদের কাছে প্রতিজ্ঞা করি- যখন আমি এই কাজটা শেষ করব বা যখন আমার রিপোর্টের শেষ পৃষ্টা লেখা হবে  তখন একটু মজা করব, একটা সিগারেট খাব।

দিনের প্রথম ও শেষ সিগারেট হল উল্লেখযোগ্য উপহার। দিনের প্রথম পুরস্কারের প্রত্যাশা নাস্তার ঠিক পরে।ধূমপায়ীকে সারাদিন অনেক কাজ করতে হবে, আর শরীরটাকে কাজের উপযোগী করার জন্য শুরুতেই একটা সিগারেট প্রয়োজন। এটা একটা কাজ সহজি করন অগ্রিম পুরস্কার। আর দিনের শেষ সিগারেট হল ঘুমানোর ঠিক আগে, মানে আনুষ্ঠানিক ভাবে দিনের কার্যক্রম শেষ করা।

ধূমপানের কিছু নির্দিষ্ট সময় লক্ষ করা যায়, যেমন- কাজ শেষ ও শুরুর সময়, কারণ অকারণে কাজের বিরতির সময়, কোন সাব-ওয়ে থেকে বের হওয়ার মুহূর্ত, ক্ষুধার্তের সময়, নিজের  প্রয়োজন ছাড়াই অন্যকে ধূমপান করতে দেখলে মনে হয় আমারও প্রয়োজন,এছাড়াও অনেক সময় আছে। 


Monday, October 14, 2013

কাঠ পোড়ালে তরল হয়!

কাঠের দহন


কাঠ তরল হতে পারে!

এটা একটা মজার প্রশ্ন, কাঠ পোড়ালে গলে না কেন? তার মানে সবাই জানে সবকঠিন পদার্থই একটা নির্দিষ্ট তাপমাত্রার পর গলে যায়। অর্থাৎ তাপ বাড়াতে থাকলে এটা তরলে পরিণত হবে। এর পরও তাপ দিতে থাকলে উহা গ্যাসে পরিণত হবে। এটা স্কুল পড়ুয়াদের কাছে বিজ্ঞান মেলায় বা বিশেষ আয়োজনে মজার ও গর্বের প্রদর্শনী হতে পারে। আমরা অন্তত সবাই শৈশবে কম-বেশি আগুন নিয়ে মজা করেছি।



ওহ! মজার প্রশ্নের সহজ উত্তর হল কাঠ গলে না কারণ "কাঠের দহন বা জ্বলে যাওয়ার তাপমাত্রা  গলনাঙ্ক বা গলে যাওয়ার তাপমাত্রার চেয়ে কম"। কি রাজনৈতিক উত্তরের মতো হয়ে গেল! কিন্তু সমস্যা হলো, দহন বা জ্বলন কি? কাঠের দহন তাপমাত্রা কত? দহন বা জ্বলন সাধারণ অর্থে রাসায়নিক ক্রিয়া, যখন কোন দাহ্য পদার্থ (এখানে কাঠ) অক্সিডাইজার (আগুনের আসে পাশের বাতাস) এর উপস্থিতিতে এর রাসায়নিক গঠন পরিবর্তিত হয়ে অন্য রাসায়নিক পদার্থে পরিণত হয়। প্রক্রিয়াটি মূলত এক্সোথার্মিক- যা আলো ও তাপ রিলিজ করতে পারে।



কাঠ সাধারণত সেলুলোজ, লিগনিন ও পানি দিয়ে তৈরি। কাঠ জ্বালালে তা ভেঙ্গে চারকল, পানি, মিথানল ও কার্বন ডাই-অক্সাইড তৈরি হয়। এটা তেমন না, পানিকে যেমন ঠাণ্ডা করলে পুনরায় বরফে পরিণত হয়। কাঠ পোড়ানো থেকে প্রাপ্ত পদার্থ ঠাণ্ডা করলে এটা অবশ্যই আগের অবস্থায় ফিরে আসে না।



দহন বা জ্বলন প্রক্রিয়ায় প্রাপ্ত প্রত্যেকটি পদার্থেরই একটি স্বাভাবিক তাপমাত্রা থাকবে যে প্রক্রিয়া আগে দেখানো হল। তাপমাত্রা যত বেশি, প্রক্রিয়াটি তত তাড়াতাড়ি ঘটবে। দহন তাপমাত্রা যদি গলন তাপমাত্রার চেয়ে কম হয় তাহলে উক্ত পদার্থ কখনও গলবে না। কারণ গলার আগেই উহা অন্য পদার্থে পরিবর্তিত হয়ে যাবে।

কাঠের ক্ষেত্রে ৫০০-৬০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় "পেরোলাইসিস" নামের একটি প্রক্রিয়া শুরু হয়। পেরোলাইসিস একটি স্বনিরবিচ্ছিন্ন এক্সোথার্মিক প্রক্রিয়া। এই তাপমাত্রায় কাঠ থেকে মিথেন ও মিথানলসহ (একই জিনিস গ্যাসোলিনের মধ্য সংযোজিত থাকে) প্রায় ১০০টি রাসায়নিক পদার্থ পাওয়া যায় যা জ্বলতে শুরু করে। যখন এইসব রাসায়নিক জ্বলতে শুর করে তখন তাপমাত্রা অনেক বেড়ে যায় ফলে অবশিষ্ট চারকল (পুড়া কাঠকয়লা) আবার ভেঙ্গে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের মত পদার্থ তৈরি হয়।



হ্যাঁ, আপনার জানার জন্যই বলছি: ঘরের তাপমাত্রায় মিথানল তরল এবং অন্য রাসায়নিক পদার্থ যেমন-ম্যাগনেসিয়াম এবং ক্যালসিয়ামও তরল আকারে সম্ভব।

 সুতরাং কাঠ তরল হতে পারে! হ্যাঁ, ইহা সত্যি!!


যদিও সব উপাদান একত্র করার পর আর কাঠ পাওয়া সম্ভব না, তেমনি সত্যিকারে তরল কাঠও না।

Wednesday, October 9, 2013

মানব শরীরে বিদ্যুৎ তৈরির কৌশল

আমাদের হার্ট কিভাবে বিদ্যুৎ তৈরি করে
বিদ্যুৎ যখন মানুষের শরীরে তৈরি হয়, তখন ইহা রাসায়নিক শক্তি থেকে তৈরি হয়

আমরা সহজ কথায় বলতে পারি বিদ্যুৎ হল বৈদ্যুতিক চার্জ বা শক্তির স্থানান্তর। কখনও শক্তির দ্বিতীয় উৎস বা শক্তির প্রবাহ বলে অভিহিত করা হয়।আমাদের দৈনিন্দন জীবনে টেলিভিশন থেকে গাড়ি প্রত্যেকটি জিনিস বিদ্যুৎ দ্বারা চালিত হয়, আর এর জন্য বিদ্যুতের একটি উৎসের প্রয়োজন। যখন বিদ্যুতের কথা আসে, তখন আমরা অসংখ্য উৎসের কথা বলতে পারি যা বিদ্যুৎ তৈরি করতে পারে। অতি-পরিচিত ও বিপুল পরিমাণে উৎপাদনের জন্য, আমরা উল্লেখ করতে পারি-  পানি-বিদ্যুৎ, পারমানবিক শক্তি, সৌর শক্তি এবং বায়ু শক্তি। প্রযুক্তির অগ্রযাত্রা আমাদেরকে এসব শক্তি ব্যবহার করে আশ্চর্য ও মুগ্ধকর জীবনোপকরণ যেমন- রোবটের আপ্যায়ন ও স্মার্ট ফোনের সুবিধা পাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছ। 



এসব শক্তির উৎস থেকে আমরা আসলে কি পাচ্ছি। ইলেকট্রন স্থানান্তরের শক্তি। আমাদের পুঁথিগত বিদ্যার দিকে পিছন ফিরে তাকালে দেখতে পাই- বিভিন্ন  ধরনের পরমাণুতে রয়েছে বিভিন্ন সংখ্যক প্রোটন, ইলেকট্রন ও নিউট্রন। প্রোটন পজিটিভ, ইলেকট্রন নেগেটিভ চার্জ বিশিষ্ট ও নিউট্রন চার্জ-হীন।


প্রত্যেকটির প্রাথমিক অংশ যেমন-অক্সিজেন যা শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে গ্রহণ করি, সোডিয়াম ও পটাশিয়াম যা খাবার হিসেবে গ্রহণ করি, এর প্রত্যেকেরই আলাদা সংখ্যক প্রোটন ও ইলেকট্রন আছে যা দ্বারা সহজেই অন্যদের থেকে আলাদা করা সম্ভব। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ইলেকট্রন ও প্রোটনের সংখ্যা সমান হয়, যা পজিটিভ ও নেগেটিভ চার্জের সমতা নিশ্চিত করে। প্রোটন পরমাণুর নিউক্লিয়াস অর্থাৎ কেন্দ্রে থাকে আর ইলেকট্রন নিউক্লিয়াসের চার দিকে ঘুরতে থাকে।


ইলেকট্রনের জন্য মজার কাণ্ড হল- তাদের একেক স্তরে (শেল) অবস্থানের জন্য একেক ধরনের শক্তি নির্ধারিত থাকে।  ইলেকট্রনকে প্রোটনের চারদিকে ঘুরার জন্য এই স্তরগুলো একটি জায়গা সুনির্দিষ্ট করে দেয়। অনেকটা ঠিক সৌরজগতের মত যেমন সূর্য্যকে কেন্দ্র করে নির্দিষ্ট দূরত্বে অন্যান্য গ্রহগুলো নির্ধারিত অর্বিটে প্রদক্ষিণ করে। নেগেটিভ চার্জ-ধারী ইলেকট্রন পজিটিভ চার্জ-ধারী প্রোটন দ্বারা আকর্ষণ করে। যে সব ইলেকট্রন নিউক্লিয়াস থেকে অনেক দূরে থাকে সেগুলো নিউক্লিয়াসের কাছের ইলেকট্রনের চেয়ে অধিক হালকা ভাবে আকর্ষণ করে যা সহজেই মুক্ত ইলেকট্রন হিসেব অন্য পরমাণু দ্বারা আকৃষ্ট হয়ে চলে যেতে পারে।


পরমাণুর বাহিরের শেলকে ব্যালেন্স শেল এবং এই শেলের ইলেকট্রনকে ব্যালেন্স ইলেকট্রন বলে যা হালকা ভাবে আবদ্ধ থাকে ও সহজেই মুক্ত হয়ে চলে যেতে পারে। যদি কোন শক্তি দ্বারা কোন ইলেকট্রন মুক্ত হয়ে কোন নির্দিষ্ট দিকে চলতে থাকে, তাহলে পাশের পরমাণুর ব্যালেন্স শেল থেকে ইলেকট্রন ঐ পরমাণুর দিকে চলতে থাকবে। কারণ পরমাণুর প্রোটন ও ইলেকট্রন সবসময় একটি নির্দিষ্ট অনুপাতে থাকতে চায়। এই মুক্ত ইলেকট্রনের প্রবাহের শক্তিই হল বিদ্যুৎ শক্তি।


বিদ্যুৎ যখন মানুষের শরীরে তৈরি হয়, তখন ইহা রাসায়নিক শক্তি থেকে তৈরি হয়। আমরা যেসব জিনিস আমাদের শরীরে গ্রহণ করি যেমন-অক্সিজেন, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি এর প্রত্যেকেরই নির্দিষ্ট বৈদ্যুতিক চার্জ আছে- অর্থাৎ তাদের নির্দিষ্ট সংখ্যক ইলেকট্রন ও প্রোটন আছে। একেক ধরনের রাসায়নিক পদার্থের পরমাণু একেক ধরনের।


আমরা যখন খাবার খাই তখন হজম প্রক্রিয়ার সাহায্যে খাবারের বৃহৎ অংশ ভেঙ্গে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতম অংশে পরিণত হয়। শরীরের কোষ খাদ্যের এই ক্ষুদ্রতম অংশ থেকে শক্তি সংগ্রহ করে, আর শক্তি সংগ্রহের এই প্রক্রিয়াকে সেলুলার রেসপিরেশন বলে। অর্থাৎ প্রত্যেক খাদ্য-কণা বা পরমাণুর মধ্যে বৈদ্যুতিক ইম্পালস তৈরির জন্য সঞ্চিত শক্তি রয়েছে যা শরীরের ভিতরের নির্দিষ্ট সময়ে উহার অবস্থানের উপর নির্ভর করে। উদাহরণ স্বরূপ, আমাদের হার্ট কিভাবে বিদ্যুৎ তৈরি করে দেখা যেতে পারে। হার্টে বিভিন্ন গ্রুপের কোষ থাকে, যেমন- উপরের  ডান দিকের অংশের নাম "Sinoatrial নড" বা SA  নড। SA  নডের (পেস-মেকার) কোষগুলোর ভিতর ও বাহিরে ইলেক্ট্রোলাইট থাকে। আমরা জানি শরীরের অভ্যন্তরে সাধারণত ইলেকট্রোলাইটগুলো হল সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস ও ক্লোরাইড। সোডিয়াম ও ক্যালসিয়াম সাধারণত থাকে নডের কোষের বাহিরে থাকে এবং ভিতরে থাকে পটাশিয়াম। এই বিশেষ ধরনের কোষ অধিক পরিমাণে সোডিয়ামকে ভিতরে প্রবেশ ও পটাশিয়ামকে বাহির হতে দেয়। ফলে সবসময় পজিটিভ চার্জ তৈরি করে এবং একটা নির্দিষ্ট মানে পৌঁছে যখন ক্যালসিয়ামকেও ভিতরে প্রবেশ করতে দেয়।ফলে কোষের ভিতরে কার্যকরি শক্তি হিসেবে চূড়ান্ত পজিটিভ চার্জ ধারণ করে এবং এমন অবস্থানে পৌঁছে যে হার্টের নার্ভ সিস্টেম দিয়ে ডিসচার্জ হওয়ার মত যথেষ্ট শক্তি সঞ্চয় করে। রসায়ন এখানে এমনই মজার কাজ করে!


এটা একটা মাত্র উদাহরণ, এরকম অসংখ্য উপায়ে আমরা যে খাদ্য খাই তা থেকে শরীর শক্তি সংগ্রহ করছে। কিন্তু শরীর কিভাবে বিদ্যুৎ তৈরি করে এর উত্তরে সহজে বলতে পারি রসায়ন বা রাসায়নিক উপায়ে। 

sourse: thttp://www.todayifoundout.com/index.php

Sunday, October 6, 2013

পিঁপড়ের সামাজিকতা



পিঁপড়ে সামাজিক জীব


দক্ষিণ এমেরিকার সৈন্য পিঁপড়ে যাদের সংখ্যা প্রতি কলোণীতে প্রায়  ৭০,০০০ হয়ে থাকে

পিঁপড়ে সামাজিক জীব। এদের পৃথিবীর প্রায় সব জায়গায়ই  পাওয়া যায়। স্বল্পপরিসরে অল্প কয়েক ডজন মিলে বাস করতে পারে আবার কয়েক মিলিয়ন- বিরাট এলাকা জুড়েও বাস করতে পারে। কিন্তু এদের সামাজিক বন্ধন ও কার্যক্রম বেশ সুশৃঙ্খল।

সম্প্রতি গবেষণায় পিঁপড়ের জীবন যাত্রার অনেক ঘটনা মানুষের জীবন যাত্রার সাথে অনেক মিল পাওয়া যায়-



  • পিঁপড়ে তাদের মৃতদেহ মাটিতে পুঁতে রাখে।
  •  সুশৃঙ্খলার সহিত সামর্থ অনুযায়ি কাজের দ্বায়ত্ব বন্টন করে কাজ করে।
  • একে অন্যের সাথে সুন্দর যোগাযোগ রক্ষা করা, এমনকি খোঁষগল্প  বা চ্যাটিং করে।
  • প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র একে অন্যের সাথে অদল-বদল করা, ইত্যাদি।

 প্রায়শই এদের মালামাল বহন করতে দেখা যায় যা এদের শরীরের ওজনের প্রায় ২০ গুণ পর্যন্ত ভারী হতে পারে।গবেষণা থেকে এত ভারী বস্তু বহনের রহস্য জানা যায়।  এদের কাঁধ বিশেষ ভাবে তৈরি যা এত ভারী বস্তু বহনের ভারসাম্য রক্ষা করে। কোন ভারী বস্তু বহনের সময় সমস্ত শরীর ও বস্তুর ওজনের সম্মিলিত ভরকেন্দ্র থাকে ঠিক শরীরের যে অংশের সাথে পা সংযুক্ত থাকে সেখানে। ফলে পাহাড়সম ঢালু পথ উঠা বা নামা, কোন বস্তুর উপর দিয়ে ভারী বস্তু নিয়ে হাটার সময় কৌণিক ভারসাম্য ঠিক রাখতে পারে।


 আকার অনুপাতে মানুষের সাথে পিঁপড়ের দৌড়নোর তুলনা করলে এরা ঘোড়ার মতো দৌড়ায়। একটি পিঁপড়ের ব্রেইনের সেল সংখ্যা প্রায় ২৫০,০০০; যেখানে মানুষের ১০,০০০ মিলিয়ন। অর্থাৎ কোন কলোণীতে ৪০,০০০ পিঁপড়ে থাকলে তাদের একত্রে একজন মানুষের ব্রেইনের সেলের আকারের সমান। 


পিঁপড়ের গড় আয়ু ৪৫-৬০ দিন। এদের গন্ধ সনাক্ত করারও শক্তি আছে। এদের মাথায় শক্ত দু'টো চোয়াল আছে যা কেঁচির মত খুলে-বন্ধ হয়। এরা খাদ্য চাবাতে বা গিলতে পারে না। তরল খাবার হিসেবে খাদ্যের রস খেয়ে শক্ত অংশ ফেলে দেয়। এদের দু'টি চোখ আছে যার প্রত্যেক চোখ আবার অনেকগুলো ক্ষুদ্র চোখের সমন্বয়ে গঠিত।এগুলোকে যৌগিক চোখ বলে।



পিঁপড়ের পেটে দু'টি পাকস্থলি থাকে। একটা পাকস্থলি এর নিজের জন্য ব্যবহার হয় আর দ্বিতীয়টা অন্য পিঁপড়েদের সাথে খাদ্য ভাগাভগি করার জন্য ব্যবহার হয়। অন্যান্য পোকা-মাকড়ের মত এর শরীরের বহি:রাবরণও শক্ত হয় যাকে এস্কো-স্কেলিটন বলে।এর জীবন চক্রের প্রধাণ চারটি ধাপ হলোঃ ডিম, লার্ভা (শুককীট), পোপা ও এডাল্ট (প্রাপ্ত বয়ষ্ক)। জীব বিজ্ঞানের ভাষায় এদেরকে Hymenoptera Formicidae বলা হয়। জানামতে ১০.০০০ এরও  বেশি প্রকারের পিঁপড়ে চিহ্নিত করা হয়ছে।
পিঁপড়ের জীবন চক্রে


পিপঁড়ের উপনিবেশ সারা পৃথিবী জুড়ে, শুধুমাত্র এ্ন্টার্কটিকা ও কয়েকটি বিচ্ছিন্ন বসবাস অনুপযোগী দ্বীপ ছাড়া। পিঁপড়ে বেশ পরিবেশ বান্ধব, স্থানীয় প্রাণীজ জৈবের প্রায় ১৫ থেকে ২৫ শতাংশ গঠনে ভুমিকা রাখে। সব পিঁপড়েই পরিবার বদ্ধ। পিঁপড়েরা পরিস্কার ও পরিচ্ছন্ন থাকতে পছন্দ করে। কিছু শ্রমিক পিঁপড়ের জন্য কাজ নির্ধারন করা থাকে, তারা বাসার ভিতরের ময়লা বাসার বাহিরের নির্দিষ্ট আবর্জনা ফেলার স্থানে ফেলে আসবে। প্রত্যেক কলোণীর জন্য নিজস্ব ও পৃথক সুগন্ধি থাকে যা দ্বারা সহজেই পৃথক করা সম্ভব।




পিঁপড়েদের মধ্যে শুধুমাত্র রাণী ও বংশ বৃদ্ধিকারী স্রীরাই বংশবৃদ্ধি কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারে

পিঁপড়েদের মধ্যে শুধুমাত্র রাণী ও বংশ বৃদ্ধিকারী স্রীরাই বংশবৃদ্ধি কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারে। অনেকেই বিশ্বাস করেন যে কোন কোন পিঁপড়ের বাসায় একাধিক রাণী থাকে, যেখানে অন্য বাসায় কোন রাণীই থাকেনা। যে পিপড়ে কলোণীতে কোন রাণী নাই তাকে "গেমারগেট কলোণী" বলে। আর যে কলোণিতে রাণী আছে তাকে বলে "কুইন রাইট। পাখাওয়ালা পুরুষ পিঁপড়েকে বলা হয় "ড্রোন"।





অনেক প্রজাতি যেমন লাল পিঁপড়ের শুঙ-কাঁটা থাকে যা বাসা রক্ষা করার জন্য ব্যবহার করে। সাধারনত কাল পিঁপড়ে ও গাছ পিঁপড়ের কোন শুঙ-কাঁটা থাকে না। কিন্তু তারা ফরমিক এসিড স্প্রে করে বিশ্রি গন্ধ ছড়াতে পারে। অনেক পাখি তাদের পাঁলকের ভিতর পিঁপড়ে রাখে যা ফরমিক এসিড স্প্রে করে এদেরকে উকুঁনের হাত থেকে রক্ষা করে।

মানুষের দীর্ঘদিনের ইতিহাস- তারা যুদ্ধ করার জন্য অনেক অর্থকড়ি খরচ করে সেনা বাহিনী পোষে থাকে। কোপেনহেগেন বিশ্ব বিদ্যালয়ের গবেষক জনাব রাসেল আদম এবার দেখলেন পিঁপড়েরাও ঠিক সে কাজটি করে।

কিছু পিঁপড়ে তাদের কলোনী রক্ষার জন্য বিশেষ ধরনের সৈন্য নিয়োগ করে, যারা আকারে বড় ও হিংস্র-ঠিক ভয়ানক অস্রধারির কাজ করে। সৈন্য পিঁপড়েরা সবসময় ঘোরাফেরা করতে থাকে। Ecitron Burchelli নামের দক্ষিণ এমেরিকার সৈন্য পিঁপড়ে যাদের সংখ্যা প্রতি কলোণীতে প্রায়  ৭০,০০০ হয়ে থাকে। এরা ডিম ও শুককীট লম্বা কলাম করে বহন করে থাকে। 




শ্রমিক পিঁপড়েকিন্তু কিছু ছত্রাক উত্পাদনকারী-Sericomyrmex  কৃষক পিঁপড়ে আছে যারা তাদের বাসায় পাতা ও নরম ‌উদ্ভিদ সংগ্রহ করে। পিঁপড়েরা পাতা সংগ্রহ করলেও তা খেতে পারে না। কারন তারা সেলুলাজ হজম করতে পারে না। ফলে পরবর্তীতে খাওয়ার জন্য  এর মধ্য মুখের লালা মিশিয়ে বিশেষ ধরনের ছত্রাক উত্পন্ন করে পুষ্টিকর খাবার তৈরি করে।  কিন্তু এরা খুবই দুর্বল,  হানাদার ও দস্যুরা এদের আত্রমণ করে থাকে।  আর  সৈন্য পিঁপড়েরা এদের রক্ষার জন্য যুদ্ধ করে থাকে। 


শ্রমিক পিঁপড়েরা ডিম ও ছোট বাচ্চাগুলো বয়স অনুযায়ি বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন গ্রুপে সাজিয়ে রাখে। রাতের ঠান্ডা থেকে রক্ষা করার জন্য ডিম ও শুককীট গুলো বাসার অধিক গভীরে রাখে। আবার দিনের বেলা ডিম ও শুককীটগুলোকে বাসার উপরের স্তরে রাখে যাতে গরম থাকতে পারে। শ্রমিক পিঁপড়েরা কোন খাবারের সন্ধান পেলে গন্ধ ছড়িয়ে সংকেত প্রদান করে যাতে কলোণীর অন্যরাও খাবারের উত্স খোঁজে পায়।



পিঁপড়ের ডিম

পিঁপড়ের ডিম
Megalomyrmex symmetochus নামক এক ধরনের পিঁপড়ে Sericomyrmex পিঁপড়ের কলোণীর ভিতরে রাণী ও শ্রমিক পিঁপড়ে নিয়ে  আলাদা একটা নিজস্ব কলোণী তৈরি করে। যার শতকরা ৮০ ভাগেরও বেশি কৃষকদের বাসা। এটা দেখতে অনেকটা প্যারাসাইট আকারের। এরা নিজেরা কোন খাদ্য তৈরি করে না, কৃষকদের তৈরি ছত্রাক খেয়ে থাকে। কৃষকদের কিছু শুককীটও এরা খেয়ে ফেলে এবং তরুনী রাণীর ডানা ভেঙ্গে ফেলে যাতে এরা কলোণি ছেড়ে উরে গিয়ে অন্য কোন কলোণী না গড়তে পারে।

কিন্তু Megalomyrmex symmetochus রা সবসময় পুরাপুরি সফল হয় না।  Gnamptogenys hartmani নামের  ছয় পা ওয়ালা দস্যু পিঁপড়ে প্রায়ই Sericomyrmex দের বাসায় আক্রমণ করে। কৃষক পিঁপড়েদের বাসায় হানা দিয়ে তদেরকে বাসা থেকে বের করে দেয় এবং অবশিষ্ট শুককীট খেয়ে ফেলে। কৃষক পিঁপড়েরা এদর বিরুদ্ধে খুব সামান্য কিছুই করতে পারে। কারন তাদের বিশেষ প্রশিক্ষিত সৈন্য নাই,  যাও আছে তাদের আবার শুঙ-কাঁটা ইতিমধ্যেই ভেঙ্গে গেছে। এরা শক্তিশালি মুখ দিয়ে কামড়ে দিতে পারে, কিন্তু এই বদ্ধ ঘরে নিজেদেরকে কামড় খাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য অধিকাংশ সময়ই উড়ে পালায় বা মারা পড়ে। অতপর Megalomyrmex symmetochus রা তাদের কলোনীতে অবশিষ্ট থাকে।




আরও পড়তে পারেনঃ

Thursday, October 3, 2013

প্রাণের বিবর্তনের নতুন ধারনা





এমেরিকার ফ্লোরিডার ওয়েস্থিমার ইন্সটিটিউট ফর সাইন্স এন্ড টেকনোলজির প্রফেসর স্টিভেন ব্যানার নতুন তথ্য দিয়েছেন যে, পৃথিবীর সাথে তুলনা করলে বিলিয়ন বছর আগে মঙ্গলে প্রথম প্রাণের কোষ গঠনের জন্য অনেক উপযোগী ছিল। এ থেকে অনেকে এমনটা বিশ্বাস ও যুক্তি সম্পন্ন মনে করছেন যে  লাল গ্রহ মঙ্গলেই প্রথমে প্রাণের শুরু হয় এবং পরবর্তীতে উল্কার আকারে পৃথিবীতে আসে।

পৃথিবীতে প্রথম প্রাণের ইতিহাস জানতে গেলে প্রাপ্ত বিভিন্ন ফসিলের তথ্য থেকে জানা যায় যে আমাদের এই গ্রহে প্রথম প্রাণের আবির্ভাব ঘটে প্রায় ৩.৫ বিলিয়ন বছর আগে। কিন্তু কিভাবে প্রথম প্রাণী কোষ পৃথিবীতে এলো সে বিষয়ে আমাদের জ্ঞানের পরিধি খুবই সীমিত।

বিজ্ঞানীদের তথ্যানুসারে গরম পৃথিবী ধীরে ধীরে ঠাণ্ডা হয়, এ সময় সাধারণ জৈব যৌগ  গঠন হয় যা ধীরে ধীরে একত্রিত হয়ে অধিক জটিল জৈব যৌগের তৈরি হয়। মহাসাগরিয় স্রোত ও সমুদ্রতলের জলবিদ্যুতের প্রভাবে সমুদ্র তলদেশে অধিকতর বৃহত্‌ যৌগ একত্রিত হয়ে শেষ পর্যন্ত প্রথম প্রোটোসেল গঠন করে।


ক্রমবর্ধমানের প্রমান থেকে দেখা যায় যে, প্রথম কোষে DNA এর পরিবর্তে RNA অস্তিত্ব রয়েছে এবং পরে DNAতে পরিবর্তন হয় যা যুক্তিসঙ্গত কিন্তু অর্জন সত্যিই খুব কঠিন, এটা ঘটে বির্বতনের
ইতিহাসের অনেক পরে। আর এটা বিশ্বাস করার জন্য প্রমান হলো অনেক গুরুত্বপূর্ন যৌগ কোষ যার গঠন বেশিরভাগ বা সম্পূর্নটা RNAদারা গঠিত যার বিবর্তন অনেক ধীরে ঘটে।


ব্যানার মনে করেন RNA অনুমান সঠিক হলে বেশি দূর এগো-বেনা। বিঞ্গানীরা মনে করেন প্রথম যখন  পৃথিবীতে প্রাণের আবির্ভাব ঘটে তখন পৃথিবী পানির নীচে ডুবন্ত ছিল এবং ডাই-অক্সিজেন ছিল খুব স্বল্পমাত্রায়। ব্যানার বলেন এই অবস্থায় প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয়, কারণ RNA গঠনের জন্য  দুইটা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ অনুঘটক বোরেট ও মলিবডেট যা অত্যন্ত বিরল।

তিনি বলেন যদি আদি পৃথিবী সত্যিই "পানির দুনিয়া" হয়ে থাকে, তাহলে বোরেট ঘনীভূত হওয়া সত্যিই কঠিন আর মলিবডেট এর জন্য সমস্যা হলো এটা অত্যন্ত জারিত (অক্সিডাইজড)। অর্থাৎ প্রতি মলিবডেট পরমাণুর জন্য চারটি অক্সিজেন পরমাণু প্রয়োজন এবং সম্ভবত প্রাচীন পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে এত পরিমাণ অক্সিজেন ছিল না।

ব্যানার বলেন যখন সহজ জৈব অণু পানিতে দ্রবীভূত হয় তখন শক্তির উৎস পাওয়া যায় কিন্তু কোন বোরেট ও মলিবডেট এর উপস্থিতি নাই, সুতরাং শেষ ফলাফল হল আলকাতরা- RNAনা। RNAএর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিল্ডিং ব্লক তৈরির জন্য- বোরেট খনিজ সহজ জৈব অণুকে কার্বোহাইড্রেট রিং তৈরিতে সাহায্য করে আর মলিবডেনাম তখন রিংগুলোকে পুন:রায় সাজিয়ে রিবোস তৈরি করে। প্রাচীন পৃথিবীর জন্য দুটি খনিজই অত্যন্ত অপ্রতুল, কিন্তু মঙ্গলে এর পরিমাণ প্রচুর।

অদ্যাবধি ১২০ টি মঙ্গলিয় উল্কা থেকে সংগৃহিত তথ্যানুসারে ব্যানারের তত্ত্বের প্রতিশ্রুতিময় প্রমান পাওয়া যায়। ব্যানার বলেন সম্প্রতি মঙ্গলিয় উল্কা পরীক্ষা করে মঙ্গলে বোরন এর অস্তিত্ব ছিল বলে প্রমান পাওয়া যায়। আমরা এখন বিশ্বাস করতে পারি যে সেখানে প্রচুর জারিত মলিবডেনাম ছিল। উপরন্তু সাম্প্রিক গবেষণা থেকে জানা যায় প্রাণের উত্পত্তির এই পরিবেশ এখনও মঙ্গলে বিদ্যমান।

এটা প্রত্যাশা করা কষ্টকর যে উল্কার ভিতরে এক্সট্রিমফিল ব্যাকটেরিয়া জীবিত অবস্থায় পৃথিবীতে এসেছে।

ব্যানার বলেন- মঙ্গলে উত্ক্ষেপন যানে যাতে পৃথিবীর কোন ব্যাকটেরিয়া না থাকে যা মঙ্গলকে সংক্রমিত করতে পারে এ জন্য 'গ্রহ সুরক্ষার' বিষয়ে অনেক সময় ব্যয় করা হয়। কিন্তু এধরনের যাত্রায় অনেক ব্যাকটেরিয়া যেমন- রেডিওডোরান্স বেঁচে থাকতে পারে, বিশেষ করে মহাকাষ যানের ভিতর যদি স্থাপন করা হয়,  উল্কা পরীক্ষা করে যেমনটা পাওয়া যায়।

প্রফেসর ব্যানারের প্রদর্শিত প্রমানকে সত্য বা মিথ্যা প্রমানিত করার জন্য যদিও আমাদের কাছে কোন কষ্ঠি পাথর এই মুহূর্তে নাই তবুও আমরা ধারনা করতে পারি যে হয়তো পৃথিবীর আগে মঙ্গলেই প্রথম প্রানের উদ্ভব হয়েছিল। এটা আমরাদের আরও আশান্বিত করে যে আমরা সত্যিই লাল গ্রহ মঙ্গলে প্রাণের অস্তিত্ব খুঁজে পাব এবং সম্ভবত সৌর জগতের অন্য কোথাও!!

Source:  BBC,Goldschmidt,www.gizmag.com



উল্কা রহস্য জানতে ক্লিক করুন

You may like the following pages